দেশের দারিদ্র আর অভাবী জেলা কুড়িগ্রামে বিনা টাকায় পুলিশের চাকরি পেলো ৪৩টি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আবেগ আপ্লুত পরিবার গুলো মাঝে খুশির বন্যা বইছে দেশ ও জাতীর কল্যাণে ভূমিকার রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। দারিদ্রপীড়িত চরাঞ্চল বেষ্টিত প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বিনা টাকায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকুরি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে।
সরেজমিনে দেখাযায়,কুড়িগ্রাম সদরের পৌরসভার ভেলাকোপা এলাকার বাসিন্দা অটোচালক নুরনবী ও রেহেনা বেগম দম্পত্যির ৩ছেলের মধ্যে মেজো ছেলে রাশিকুল ইসলামের পুলিশের চাকুরির খবরের পরিবারে বইছে আনন্দের জোয়ার। আনন্দে অশ্রুসিক্ত পরিবারের সদস্যরা। কান্নার দৃশ্য দেখে যে কারোই মনে হবে কোন দু:সংবাদের কান্না। বাস্তবে সেটি নয় বাবা-মাসহ সকলের চোখের পানি ছেলের পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরির সংবাদে।
অটোচালক নুরনবী বলেন,আমি এই অটো চালিয়ে বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের ৭জনের সংসার চালাই। ছেলেদের অনেক কষ্টে মানুষ করছি। আজ রাশিকুলের চাকরির খবর শুনে কান্না ধরে রাখতে পারছিনা। সকলের কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই সে যেন দেশ ও বাবা-মায়ের সেবা করতে পারে।
রেহেনা বেগম বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে মেজো ছেলের বিনা টাকায় পুলিশের চাকুরির হইছে। আমার স্বপ্ন ইচ্ছে ছিল সন্তানের মধ্যে একজন হলেও যেন
পুলিশের চাকরি করতে পারে। আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রাশিকুল ইসলাম বলেন,সত্যি আমি গর্বিত আমার মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। শুধুমাত্র ১৩০টাকায় পুলিশের চাকরি হবে ভাবতে পারিনি। তারপরেও পরিবার ও বন্ধুদের পরামর্শে লাইনে দ্বাঁড়াই। এভাবে চাকরিটি হবে কল্পনাতেও ছিল না।
রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা ইউনিয়নের রামমিং গ্রামের বাসিন্দা প্রমিলা রাণী বলেন, প্রায় দু’বছর আগে স্বামী অজিত কুমার মন্ডল মারা গেছেন। পরিবারের কর্তা না থাকলে সংসারের কি অবস্থা হয় সেটা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। স্বামী হারিয়ে অভাবের সংসারে মেয়ে পূর্ণিমা রাণী মন্ডলকে বড় করছি। মেয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পুলিশের চাকরি হয়েছে ভালো লাগতেছে। মেয়ে আজ নিজের পায়ে নিজেই দ্বাঁড়াতে পেয়েছে।
পূর্ণিমা রাণী মন্ডল বলেন, নিজ মেধা এবং যোগ্যতা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে চাকরির খবরটি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো খুব খুশি হতো। বাবা অবর্তমানে মা যে দায়িত্ব নিয়ে বড় করেছেন এই চাকরি হওয়াতে মায়ের সেই কষ্ট স্বার্থক হয়েছে।
চিলমারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর ফেচুকা চরের কৃষক মো. আব্দুল গফুরের সন্তান আবু সায়েম বলেন, শুধুমাত্র ১৩০ টাকায় কোন প্রকার তদবির বা দালাল ছাড়াই পুলিশের চাকরি হবে বিশ্বাসই করতে পারছি না।
সদর উপজেলার মোগলবাসা এলাকার রাজমিস্ত্রী জাহাঙ্গীর মন্ডলের ৪মেয়ে। টানাটানির সংসার। তার দ্বিতীয় মেয়ে তাসমিন নাহার চাকুরি পাওয়ায় আনন্দিত
পরিবারের সবাই। তাসমিন নাহার বলেন, জাহাঙ্গীর মন্ডল বলেন, এতো খুশি আগে কখনও হইনি। ভাবতেই পারছি না মেয়ের চাকরি হয়েছি। বাইরে সব সময় শুনি লোক আর টাকা ছাড়া কোন চাকরি হয় না। তারপরেও মেয়ে গেছে পরীক্ষা দিলো। আজ এই চাকরিটা মেয়ের যোগ্যতায় পেয়েছে।
পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন,দারিদ্র সীমার নিচে জেলা থেকে নিখুঁত যাচাই-বাছাই করাটা ছিল বেশি চ্যালেঞ্জিংয়ের কাজ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে সঠিক ছেলে-মেয়েকে বের করে আনতে পারাটাই আত্মতৃপ্তি। মাননীয় আইজিপি স্যারের নির্দেশে সেই কাজটি করতে পেরে জেলা পুলিশ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ১ হাজার ৭২০ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৩৪৪ জন উত্তীর্ণ হয়। তাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ- ২০০ মিটার, ১৬০০ মিটার, পুশআপ, লং জাম্প, হাইজাম্প, ড্রাগিং, রোপ ক্লাইম্বিং ইভেন্ট শেষে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ৪৩জন উত্তীর্ণ হন। এদের মধ্যে-পুরুষ-৩৭জন এবং নারী-৬জন। এরমধ্যে সদর-১৪ জন, উলিপুর- ৫ জন, নাগেশ্বরী- ৬ জন, চিলমারী- ২জন, রাজারহাট- ৬জন, ফুলবাড়ী- ৪জন, ভূরুঙ্গামারী- ৪ জন, রৌমারী এবং রাজিবপুর উপজেলায় একজন করে চাকরি পেয়েছেন।